করোনা, সিস্টেমের গলদ এবং ব্যক্তির উদ্বেগ
আমরা যারা প্রগতিশীল তারা বরাবরের মতো 'গুজব' নিয়ে আতঙ্কে ভুগতেছি। কিন্তু কোন পরিবেশে গুজব হাওয়ার বেগে রটে, কোন পরিবেশ কখন গুজব-উর্বর হয়ে উঠে সে বিষয়ে তারা আলাপ আগে বাড়ান না।
আমরা যারা প্রগতিশীল তারা বরাবরের মতো 'গুজব' নিয়ে আতঙ্কে ভুগতেছি। কিন্তু কোন পরিবেশে গুজব হাওয়ার বেগে রটে, কোন পরিবেশ কখন গুজব-উর্বর হয়ে উঠে সে বিষয়ে তারা আলাপ আগে বাড়ান না।
আমি জানি, আমার এই লেখার দুপয়সা দাম নাই। কিন্তু একথাগুলো বলতে হলো, কারণ অনেকেই উদ্বিগ্ন হয়ে মানুষকে গালাগাল করছেন ঠিক সেইভাবে যেভাবে ব্রিটিশরা আমাদের করতো, যেভাবে এখনো পশ্চিমরা, আমাদের করে। উদ্বিগ্ন হয়ে একটা ছোট্ট ব্যাপার যাতে না ভুলে যান, আপনি আপনার দৃষ্টিকোণ থেকে যেভাবে মানুষকে ডিহিউম্যানাইজ করছেন, অন্যজনও তার দৃষ্টিকোণ থেকে আপনাকে ডিহিউম্যানাইজ করছে। রাষ্ট্রের ব্যর্থতার দায় মানুষের ওপর চাপিয়ে মানুষকে ডিহিউম্যানাইজ করাটা অন্তত বন্ধ করি! এই দুর্যোগ আমাদের সবার, ডিহিউম্যানাইজ করে এটা মোকাবিলা সম্ভব না।
'জরুরী অবস্থা' জারী হলে সাধারণভাবে সংবিধানের ৩৬-৪২ অনুচ্ছেদের মধ্যে ঘোষিত 'মৌলিক অধিকার' যেমন, মানুষের চলাফেরার, সমাবেশের, সংগঠনের, চিন্তা ও মতপ্রকাশের, পেশা বা বৃত্তি গ্রহণের এবং ধর্মপালনের স্বাধীনতা ইত্যাদি স্থগিত থাকে। অর্থাৎ নির্বাহী আদেশে এই মৌলিক অধিকার গুলি স্থগিত করা যায় আর এর বিরুদ্ধে কেউ চাইলেও রিট করতে পারে না। 'জাতীয় দুর্যোগে'র বদলে ‘জরুরী অবস্থা’ জারী করে মানুষের যতটুকু বাক স্বাধীনতা আছে তাও কেড়ে নিলে, এ বিপর্যয় থেকে এখানকার মানুষদের রক্ষা করা যাবে না।
সামিট গ্রুপকে বসিয়ে বসিয়ে ২ হাজার কোটি টাকার বিল দেয়া যায়, এস-আলম গ্রুপের তিন হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স মওকুফ করে দেয়া যায়, কিন্তু সারাবছর হাড়ভাঙ্গা খাটুনি খাটা গার্মেন্টসের মেয়েগুলোকে স্ব-বেতনে ছুটি দেয়া যায়না কেন?
আমাদের মনে রাখতে হবে, উপনিবেশ থেকে স্বাধীন হওয়া দেশে রাষ্ট্র পরিচালনার উপনিবেশিক কাঠামো ও আইনকানুন-বিচারব্যবস্থা যতক্ষণ বহাল থাকবে ততক্ষণ নিরপেক্ষ ভোট দিয়ে যাকেই আমাদের প্রতিনিধি হিসাবে ক্ষমতায় পাঠানো হবে সে-ই নাগরিকের সাথে রাজার মতো, বড়োজোর দলীয় প্রধানের মতো আচরণ করবে; সে-ই জুলুম-অবিচার আর লুটপাট করবে। এটা আমরা ১৯৯০ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত নিরপেক্ষ নির্বাচন করে সরকার গঠন করে দেখেছি।
উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিকদের পক্ষে এই জবাবদিহী পত্রটি জমা দেন শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবি, লেখক, আন্দোলনকর্মী ও ছাত্রদের একটি দল। উদ্বিগ্ন অভিভাবক ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির কাছে...
ভারত 'এক্সক্লুসিভ' রাজনীতি করছে, এর বিরুদ্ধে লড়তে হলে আমাদের আরো বেশি 'ইনক্লুসিভ' রাজনীতি করতে হবে। সচেতনভাবেই। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির জবাব সাম্প্রদায়িকতা দিয়ে হয় না; যদিও একস্থানের সাম্প্রদায়িকতা আরেকস্থানে সাম্প্রদায়িকতাকে উষ্কে দিতে পারে। ভারত রাষ্ট্র হিসেবে 'মুসলমান বিরোধিতা' করছে বলে আমরা যদি এখানে 'হিন্দু বিরোধিতা' করতে যাই তাহলে আমাদের সামনে ভয়ঙ্কর বিপদ। তাই, একমাত্র সবধর্মের 'ইনক্লুসিভ' রাজনীতিই হতে পারে ভারতের ফ্যাসিস্ট রাজনীতিকে মোকাবেলা করার সবচেয়ে বড়ো উপায়।
ভারতে সুপ্রিম কোর্ট প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৭৭৩ সালে, কোলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে, কোম্পানির আমলে । এর আগে ভারতের পুতুল সম্রাটের কাছ থেকে প্রথমে দেওয়ানী এবং শেষ পর্যন্ত ফৌজদারি বিচারের ক্ষমতাও...
সমাজের পরতে পরতে ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের যে ভরকেন্দ্রগুলো আছে-- সেগুলো বিশ্বজুড়েই তরুণ-তরুণীদের সামনে ন্যায্যতা নিয়ে থাকতে পারছে না আর। তরুণরা ক্ষমতা ও কর্তৃত্বের জায়গাগুলোর অন্যায্যতা ও অযৌক্তিকতা চিনে ফেলছে। দুর্নীতিকে শনাক্ত করছে। সেগুলো চ্যালেঞ্জ করছে, কথা বলছে, গান করছে, কবিতা লিখছে, গ্রাফিথি আঁকছে, প্রশ্ন তুলছে, উত্তর খুঁজছে এবং গণতন্ত্র চাইছে-- যে গণতন্ত্র সকলকে মতামত প্রকাশের সুযোগ দেয়। কিন্তু অনেকের জন্য এ পরিস্থিতি মেনে নেয়া, মানিয়ে নেয়া কষ্টকর। ফলে এসব আঁটকানো চাই। সন্ত্রাসের আবরণে আটকানোর কাজটা সহজ হয়।
লেখক: রাখাল রাহা [লেখকের নোট: এই লেখাটায় যে বানান ব্যবহৃত হয়েছে তা বর্তমান বাংলা প্রমিত বানানের সর্বশেষ রূপ নয়। এখানে যেহেতু ১৯৩৬ সালের কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রবর্তিত প্রমিত বানান, ১৯৮৮ সালের...